তৃতীয় শ্রেণির স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা মামলায় শরীয়তপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক দুই আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন। রায় ঘোষণার পর আসামিরা উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানিয়েছেন।
শরীয়তপুরের আদালত সূত্রে জানা গেছে, ভেদরগঞ্জ উপজেলার ১ নম্বর সখিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রীকে বিভিন্ন সময় কুপ্রস্তাব দিতেন একই গ্রামের ফরিদ সেক ও জাকির সেক। ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই ওই ছাত্রী বাড়ি থেকে বেলা ১১টার দিকে স্কুলে যাওয়ার জন্য বের হন। আসামি ফরিদ সেক ও জাকির সেক মিলে পরিকল্পিতভাবে ওই ছাত্রীকে ধরে নিয়ে পাশের জয়নাল আবেদীনের পরিত্যক্ত টিনের ঘরে নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যা করে।
পরে রাতে বস্তাবন্দী করে নিয়ে ছৈয়াল কান্দি গ্রামের বুল বুল সরদারের পাটক্ষেতে লাশ ফেলে দেয়। ঘটনার দিন স্কুল থেকে বাড়িতে না ফেরার পর তাকে খুঁজে না পেয়ে নিখোঁজ ছাত্রীর বড় ভাইয়ের স্ত্রী সখিপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
ওই জিডির সূত্র ধারে পুলিশ নিখোঁজ ছাত্রীকে উদ্ধারের চেষ্টা চালায়। এক সপ্তাহ পরে ২২ জুলাই সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ছৈয়াল কান্দি গ্রামের বুল বুল সরদারের পাটক্ষেতে ভাসমন অবস্থায় তার অর্ধগলিত লাশ দেখতে পায় পুলিশ। এ ঘটনায় ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে সখিপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার আসামি ফরিদ সেক ও জাকির সেককে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামিরা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানন্দি দেন। তারা সেখানে ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যার কথা স্বীকার করেন।
ওই মামলায় আটজন স্বাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আজ বুধবার সকালে শরীয়তপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. আবদুস সালাম ৯(২) /৩০ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে আসামি দুজনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। একই সঙ্গে লাশ গুম করার জন্য দণ্ডবিধি ২০১ ধারায় ৭ বছর স্বশ্রম কারাদণ্ডাদেশ এবং ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ডাদেশ প্রদান করেন।
সরকারের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন নারী ও শিশু আদালতের পিপি ফিরোজ আহম্মেদ। আর আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. শাহ আলম।
রায় ঘোষণার পর মামলার বাদী ওই নিহত ছাত্রীর বাবা বলেন, ‘রায়ে আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি। আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে আসামিদের ফাঁসির রায় কার্যকর করার জন্য দাবি করছি।’
এ বিষয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী নারী শিশু আদালতের পিপি ফিরোজ আহম্মেদ বলেন, ‘মামলার বিচারকের রায়ে বাদীপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. শাহ আলম বলেন, ‘মামলার রায়ে আমরা আসামিপক্ষ সন্তুষ্ট হতে পারিনি। আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব।’



0 Comments