আসন্ন যশোর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপি একমাত্র প্রার্থী নগর বিএনপির সভাপতি মারুফুল ইসলামের মনোনয়নপত্র ঋণ খেলাপির দায়ে বাতিল হয়ে গেছে। তিনটি সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে দলটির কোন প্রার্থী নেই। ৯টি সাধারণ ওয়ার্ডের তিনটিতে বিএনপির কেউ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি। পুরো পৌরসভায় বিএনপির নেই কোন নির্বাচনী তৎপরতাও।
এমন পরিস্থিতিতে সাবেক মেয়রের ঋণ খেলাপির বিষয়টি সর্বত্র আলোচনা হলেও, দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, শুধু মেয়র পদে নয় পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকেই ছিটকে পড়েছে বিএনপি। যা বিএনপির মতো একটি বড় দলের যশোরে ক্ষয়িষ্ণু সাংগঠনিক বাস্তবতার নির্মম চিত্র।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ নেতা সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের জন্মস্থান যশোর। তার প্রভাবে যশোর শহরে বিএনপির শক্ত অবস্থান দীর্ঘদিনের। কিন্তু তরিকুল ইসলামের অবর্তমানে দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকট হয়েছে। সাংগঠনিক অবস্থা দিনে দিনে দুর্বল হয়েছে। বিষয়টি সামনে চলে এসেছে আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। পৌরসভার সংরক্ষিত ও সাধারণ মিলে ১২টি কাউন্সিলর পদের বিপরীতে বিএনপি থেকে মাত্র ছয়জন এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নির্বাচন অফিস থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। তবে দলীয় সিদ্ধান্তে নয়, ব্যক্তিগত উদ্যোগেই তারা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন। অথচ সর্বশেষ পৌরসভা নির্বাচনে দলটির অধিকাংশ ওয়ার্ডে দলটির একাধিক প্রার্থী ছিলেন। যাদের মধ্যে দুইজন বিজয়ী হন।
যশোর নির্বাচন অফিসের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এবারের নির্বাচনে ১নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আহেমেদ শাকিল, ২নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর রাশেদ আব্বাস রাজ ও সাবেক কাউন্সিলর শেখ সালাউদ্দিন, ৩নং ওয়ার্ডে সাব্বির মল্লিক, ৭নং ওয়ার্ডে সাবেক কাউন্সিলর জুলফিকার আলী, ৮নং ওয়ার্ডে সাবেক কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান মাসুম, ৯নং ওয়ার্ডে শেখ ফেরদৌস ওয়াহিদ বিএনপিনেতা হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন। এর বাইরে ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়াডে দলটির কোন কাউন্সিলর প্রার্থী নেই। আর সংরক্ষিত তিনটি মহিলা কাউন্সিলর পদে বিএনপির কোন নেত্রী মনোনয়নপত্র সংগ্রহই করেননি।
এ ব্যাপারে যশোর নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু বলেন, কাউন্সিলর পদে বিএনপির কোন মনোনীত প্রার্থী নেই। কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপির কতজন নেতা এই নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন, সব ওয়ার্ডে প্রার্থী আছে কিনা তা আমার জানা নেই।
সূত্র বলছে, যশোর পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে নগর বিএনপি সাবেক মেয়র মারুফকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে সামনে নিয়ে আসে। এজন্য একটি সভাও আহ্বায়ন করা হয়। কিন্তু সেই সভায় প্রার্থী হতে আগ্রহী রফিকুল ইসলাম মুল্লুক চাঁনকে ডাকা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে কথা উঠলে আয়োজকদের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয় এবং তড়িঘড়ি করে সভাটি শেষ করার আগে মারুফুল ইসলামের পক্ষে সিদ্ধান্ত হয়। তবে কাউন্সিলার প্রার্থীদের ব্যাপারে কোন আলোচনা হয়নি।
দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, আসন্ন যশোর পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক মেয়র মারুফুল ইসলাম। তিনি এটার প্রধানতম দাবিদারো। কিন্তু তার পক্ষের নেতারা প্রতিপক্ষ গ্রুপের নেতাকর্মীদের সাথে কোন ধরনের সমন্বয় না করে মারুফকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন। নগর বিএনপির ‘কথিত’ একটি বর্ধিত সভা হলেও সেখানে তৃণমূলের নেতাদের কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়নি। সংগত কারণে প্রার্থী হতে আগ্রহ হারান তরিকুল পরিবার ঘনিষ্ঠ কাউন্সিলর প্রার্থীরা। শুধু তাই নয়, যশোর বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের এই নির্বাচন নিয়ে তেমন কোন আগ্রহও নেই। তাই নৌকার প্রার্থী ইতিমধ্যে বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের বর্ধিত সভার মাধ্যমে প্রচারণা শুরু করলেো বিএনপির এমন একটি সভাও আয়োজন করা সম্ভব হয়নি।
বিএনপির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, মেয়র পদে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই-জেনেই বিএনপি সারাদেশে নির্বাচনে যাচ্ছে। কিন্তু গ্রপ রাজনীতিতে জয়ী হতে নগর বিএনপি ও জেলা বিএনপির এক শীর্ষ নেতা একজন ঋণখেলাপিকে ধানের শীষের জন্য তদবির করেন। কাউন্সিলর পদে তাদের কোন আগ্রহ নেই। মূলত এটা তাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে এখন তারা নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন।
এ ব্যাপারে যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, নির্বাচন করার পরিবেশ নেই। নিশ্চিত পরাজয় জেনে কেউ তো আর নির্বাচন করতে আগ্রহী হবে না। নির্বাচন করতে কাউকে জোর করাও যায় না।
‘আমাদের বিরুদ্ধে মাগুরা নির্বাচনের অভিযোগ ছিলো। এখন শত শত ‘মাগুরা মডেলের’ নির্বাচন হচ্ছে। এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে লাভ কী?’ যোগ করেন অ্যাডভোকেট সাবু।



0 Comments