সর্বশেষ

8/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

একে একে যশোরের রাজনৈতিক আকাশ থেকে প্রায় পরপর ছিঁটকে পড়লো তিনটি নক্ষত্র: প্রিয় যশোর নিউজ২৪/৭

 


যশোরের রাজনৈতিক আকাশ থেকে প্রায় পরপর ছিঁটকে পড়লো তিনটি নক্ষত্র। যা থেকে এ অঙ্গন বিরাট শূণ্যতায় পরিণত হলো! সর্বশেষ খালেদুর রহমান টিটোর মৃত্যুতে ঘুরে ফিরে আলোচনায় উঠে আসছে আরও দু’টি নাম, তরিকুল ইসলাম ও আলী রেজা রাজু। রাজনৈতিক অঙ্গনে তাদের তিনজনের অবস্থান ভিন্ন ভিন্ন মেরুতে হলেও ছিলেন ঘনিষ্ট বন্ধু। কিশোর বেলার বন্ধুত্বের সুবাদেই একজন অন্যজনকে ‘তুই’ বলে ডাকতেন।

বিএনপির একাধিকবার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী তরিকুল ইসলাম, জাতীয় পার্টিতে থাকাকালীন প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে যশোর-৩ সদর আসনের সংসদ সদস্য খালেদুর রহমান টিটো এবং বিএনপি ও আওয়ামী লীগে পর্যায়ক্রমে দীর্ঘদিন জেলা সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী যশোর-৩ সদর সদর আসনের সংসদ সদস্য আলী রেজা রাজু ছিলেন একে অপরের ঘনিষ্ট বন্ধু। এই তিন বন্ধুর রাজনৈতিক পরিচয়ে যখন যেখানেই অবস্থান থাকুক না কেনো, তারা ছিলেন বন্ধু, এটাই ছিলো যেনো সবচেয়ে বড় পরিচয়। তারা রাজনীতিতে কখনো এক দলে, কখনোবা ভিন্ন ভিন্ন দলে একে অপরের প্রতিপক্ষ ছিলেন। কিন্তু বন্ধুত্বের পরিচয় ছিলো সবার উপরে।
ছাত্রজীবনে খালেদুর রহমান টিটো এবং তরিকুল ইসলাম ছিলেন যশোর জিলা স্কুলের ছাত্র। এরপর যশোর মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয়ে পড়াকালীন এ দুই বন্ধুই বাম ধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন। পরে বাম রাজনীতিতেও যুক্ত ছিলেন তারা। একসময় তরিকুল ইসলাম বিএনপি এবং খালেদুর রহমান টিটো জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। অপর বন্ধু আলী রেজা রাজু বিএনপিতে যোগ দিয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি আওয়ামী লীগে যোগদানের আগ পর্যন্ত ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত টানা ১৪ বছর বন্ধু তরিকুল ইসলামের সাথে ঘনিষ্ট থেকেই যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-৩ সদর আসনের ভোট বিশেষভাবে আলোচিত। এ নির্বাচনে তিন বন্ধু তরিকুল ইসলাম ধানের শীষ, খালেদুর রহমান টিটো লাঙল এবং আলী রেজা রাজু নৌকা নিয়ে একে অপরের প্রতিপক্ষ হন। চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সে নির্বাচনে আলী রেজা রাজু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
কিন্তু এই সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা প্রতিপক্ষ হওয়ার ঘটনায় এ তিনজনের বন্ধুত্বে ন্যুনতম চিড় ধরেনি কখনোই। বরং এর পরেও যশোর ইন্সটিটিউটের একটি নির্বাচনে দেখা গেছে খালেদুর রহমান টিটো এবং তরিকুল ইসলামের সমর্থন নিয়ে দুটি প্যানেল ভোট যুদ্ধে লিপ্ত হলেও এ দুই বন্ধু পাবলিক লাইব্রেরির সামনে তুমুল আড্ডায় মেতে ওঠেন। শুধু এক সাথে বাদাম খাওয়াই নয়, এক আগুনে দুই বন্ধু একসাথে সিগারেট ধরিয়ে মনের সুখে টেনেছেন। ২০১০ সালে যশোর জিলা স্কুলের ১৭৫ বছর পূর্তি উৎসবে তরিকুল ইসলাম এবং খালেদুর রহমান টিটো মাঠের একপাশে দু’টি চেয়ার নিয়ে বসে আড্ডায় মেতে ওঠেন। এখানেও দেশলাইয়ের একটি কাঠিতে দুই বন্ধু যখন সিগারেট ধরান, তা উপস্থিত সাংবাদিকদের দৃষ্টি কাড়ে। উৎসবের মূল ছবি ছাপিয়ে দুই বন্ধুর এই ছবি হয়ে ওঠে ভাইরাল।
দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই আলী রেজা রাজু শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এদিন বিমর্ষ ছিলেন খালেদুর রহমান টিটো। শহরের ঘোপ সেন্ট্রাল রোডে বন্ধু রাজুকে শেষবারের মত দেখতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। আর তরিকুল ইসলাম বন্ধু রাজুর কফিন আঁকড়ে শিশুর মত কান্নায় ভেঙে পড়েন। চিৎকার করে বিলাপ করতে থাকেন ‘ও বন্ধুরে তুই আমাকে ফেলে কোথায় চলে যাচ্ছিস!’ সেদিন তরিকুল ইসলামের কান্না দেখে পথের অচেনা মানুষও কান্নায় ভেঙে পড়েন।
তরিকুল ইসলামও দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সেদিনও কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন বন্ধু খালেদুর রহমান টিটো। আর গতকাল ১০ জানুয়ারি ত্রি-রত্নের শেষ খুঁটিটিও উপড়ে গেলো! শেষঃনিশ্বাস ত্যাগ করলেন খালেদুর রহমান টিটো। যশোরের রাজনীতির আকাশ থেকে শেষ নক্ষত্র ছিঁটকে পড়লো।


Post a Comment

0 Comments