সর্বশেষ

8/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

২০০ বছরের কুসংস্কার ভেঙে খাজুরায় দুর্গোৎসব


                                                                             প্রতিকী ছবি

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা।  দূর্গতিনাশিনী দশভুজা দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে আজ (বৃহঃবার) শুরু হয়েছে প্রথমদিনের আনুষ্ঠানিকতা মহাষষ্ঠী পূজা।  দেশের প্রতিটি শহর, বাজার, গ্রাম ও পাড়া-মহল্লার মন্দিরগুলোতে মহাসমারোহে চলছে পূজা-প্রার্থনা। আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর পূর্বে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার খাজুরা বাজারের পাশ্ববর্তী জহুরপুর গ্রামেও এর ব্যতিক্রম ছিলনা। তখনও সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পূজা এলে নিজেদের মধ্যকার সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নিয়ে মহাসমারোহে উদযাপন করতো দুর্গাপূজা। তবে হঠাৎই দৃশ্যপট পাল্টে যায়। শেষবার দুর্গাপূজার সময়ে গ্রামে আসে বড় ধরনের মহামারি । তখন থেকেই বন্ধ হয়ে যায় এখানকার পূজা। কুসংস্কারের সেই বেড়াজাল ভেঙে ২০০ বছর পর এ বছর সেখানে দুর্গোৎসব হচ্ছে। গ্রামের একদল আধুনিকমনা তরুণ এর আয়োজন করেছে।

ষষ্ঠীর দিন বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) সরেজমিনে দেখা যায়, বাঘারপাড়া-কালীগঞ্জ মহাসড়কের জহুরপুর বাজারের প্রবেশমুখে বিশাল তোরণ পেরিয়ে জহুরপুর সার্বজনীন মন্দির প্রাঙ্গণে সুসজ্জিত দুর্গাপূজার মন্ডপ। সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এ মন্ডপে স্বাস্থ্যবিধি মানতে প্রবেশমুখে রাখা হয়েছে সাবান-জল। নারী-পুরুষের জন্য যাতায়াতের আলাদা ব্যবস্থা। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে মন্ডপের ভেতরে তিন ফুট দুরত্বে অনেকগুলো সাদা রঙের বৃত্ত রয়েছে। এর মধ্যেই প্রতিজন ভক্ত ও দর্শনার্থীরা দাঁড়াবেন। এখানে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা বজায় রাখতে পুলিশ, গ্রাম পুলিশ, আনসার সদস্যসহ রয়েছে নিজস্ব সেচ্ছাসেবক। নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত প্রতিজন ভক্ত ও দর্শনার্থী মন্ডপের ভেতরে থাকতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে সবার মুখে বাধ্যতামূলভাবে মাস্ক রাখতে হবে বলে জানান আয়োজক কমিটি।

দুর্গাপূজা বন্ধের সেই ইতিহাস জানতে কথা হয় গ্রামের প্রবীনদের সাথে। আশি বছর বয়সী হাজারী বিশ্বাস, মন্দিরের পূজারিনী কল্পনা বিশ্বাস, পঁচাত্তর বছর বয়সী অনাথ সরকার জানান, তারা কখনো গ্রামে দুর্গাপূজা দেখেননি। কিন্তু বংশ পরম্পরায় শুনেছেন প্রায় ২০০ বছর পূর্বে গ্রামে পূজার আয়োজন করা হয়েছিলো। ঠিক সে সময়ই গ্রামজুড়ে কলেরা মহামারি আসে। এতে বহু লোকের প্রাণহাণী ঘটে। সে বছর থেকেই এখানকার দুর্গাপূজার আয়োজন বন্ধ হয়ে যায়।

তারা আরো জানান, পূর্ব পুরুষদের ধর্মীয় বিশ্বাস ছিল মা দুর্গা কোন কারণে অসন্তুষ্ট হয়েছলিা, সে কারণেই মহামারী আঘাত হানে। সেই বিশ্বাস থেকে তারা এর আগে কখনো পূজার আয়োজন করেনি।

জহুরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একই গ্রামের সন্তান তাপস কুমার ও পল্লী চিকিৎসক লাল্টু সরকার জানান, আজ থেকে ৩০ বছর পূর্বে একবার দুর্গাপূজা উদযাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু সে বছর বিরূপ আবহাওয়ার কারণে তা পন্ড হয়ে যায়।

দুর্গোৎসব আয়োজক কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন বিশ্বাস জানান, ‘সম্প্রতি যশোর সরকারি এমএম কলেজ থেকে গণিতে মাষ্টার্স শেষ করেছি। করোনার কারণে এ বছর দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় লম্বা ছুটি পেয়েছি। তাই পূজার আগে গ্রামে এসে সমবয়সী ও ছোটদের নিয়ে এবার দুর্গাপূজার আয়োজন করেছি।’

কমিটির সভাপতি সরকারী চাকুরিজীবী সীমান্ত সরকার বিশ্বাস জানান, ‘প্রায় ২০০ বছর যাবৎ গ্রামের লোক কুসংস্কারের বেড়াজালে আবদ্ধ ছিল। মা দুর্গার আগমন কখনো অশুভ হয় না। তার প্রমাণ এ বছর গ্রামে আয়োজিত দুর্গোৎসব। এবার মায়ের আগমনে সকল অন্ধকার ও দুঃখ-কষ্ট ঘুচে যাবে। করোনারূপী অসুর বিনাশ হবে।’

জানতে চাইলে জহুরপুর ইউপি চেয়ারম্যান দীন মোহাম্মদ দীলু পাটোয়ারী জানান, ‘আমার ইউনিয়নে ছয়টি স্থানে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে জহুরপুর সার্বজনীন মন্দির প্রাঙ্গণের পূজা অন্যতম। কয়েক যুগের ধর্মীয় এক কুসংস্কারকে ভেঙে সেখানে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হওয়ায় তা সকলের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। আমি আয়োজক কমিটিকে সাধ্যমত আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছি ও সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছি।’ স্বাস্থবিধি মেনে শান্তিপূর্ণ ও আনন্দঘন পরিবশে আমার ইউনিয়নে দুর্গোৎসব শেষ হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বাঘারপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া আফরোজ জানান, ‘বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতির কারণে এ বছর দুর্গোৎসব একটু ভিন্নভাবে পালিত হবে। শান্তিপূর্ণভাবে এ উৎসব শেষ করতে ইতিমধ্যে তিন স্তরের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। আশা করছি সরকারী নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুষ্ঠুভাবে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।’


Post a Comment

0 Comments