সর্বশেষ

8/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

যশোরের মণিরামপুরে জোড়া হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন


 যশোরের মণিরামপুরে আলোচিত দুই হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, 'মেয়েলি ঘটনা' ফাঁস করার হুমকি দেওয়ায় আহাদকে হত্যার পরিকল্পনা করে বাদল। আহাদকে খুন করতে গিয়ে উল্টো তার হাতেই খুন হয় বাদল। এই হামলায় আহাদ গুরুতর জখম হলে তাকে খুন করে বাদলের বন্ধু মানিক।


এই মানিককে পুলিশ আটক করেছে। তার কাছ থেকেই এই হত্যারহস্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন।

গত ১৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় মণিরামপুর উপজেলার ঢাকুরিয়া ইউনিয়নের উত্তরপাড়া গ্রামে বাদল হোসেন (২২) ও আহাদ মোলস্না (২৫) খুন হন। নিহত বাদল যশোর সদর উপজেলার জয়ন্তা গ্রামের আক্তার গাজী ওরফে আকু গাজীর ছেলে ও একই এলাকার লোকমান মোলস্নার ছেলে আহাদ মোলস্না। ওইদিন রাতে নিহত বাদল হোসেনের মা আঞ্জুয়ারা বেগম অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের নামে মণিরামপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।

গ্রেপ্তারকৃত আসামি জাহিদ হাসান মানিক (২৩) সদর উপজেলার চাউলিয়া গ্রামের চাঁন মিয়ার ছেলে। তিনি পেশায় একজন ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালক।

বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ২১ অক্টোবর জাহিদ হাসান মানিককে গ্রেপ্তার করা হয়। তার স্বীকারোক্তিতে ঘটনাস্থল থেকে আধা কিলোমিটার দূরে মোশারফ হোসেন টুকু মেম্বারের পুকুরের পানির ভিতর থেকে ভিকটিম বাদল হোসেনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। এরপর বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে ঘটনাস্থলের পশ্চিমপাশের আলতাফ হোসেনের ধানি জমি থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত বার্মিজ চাকু উদ্ধার করা হয়েছে।

জাহিদ হাসান মানিকের তথ্যমতে, সে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। মোটরসাইকেল ভাড়া দিতে দিতে বাদল হোসেনের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। বাদল হোসেনের একাধিক নারীর সঙ্গে সম্পর্ক আছে। বিষয়টি জেনে যায় প্রতিবেশী আহাদ মোলস্না। সে এই বিষয়টি বাদলের বাবা-মাকে বলে দেওয়ার হুমকি দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বাদল পরিকল্পনা করে আহাদকে উচিত শিক্ষা দিবে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী বন্ধু জাহিদ হাসান মানিকের সহযোগিতা চায়।

ঘটনার দিন বিকালে বাদল ও মানিক মোটরসাইকেল নিয়ে যায় আহাদের কাছে। আহাদকে নিয়ে তারা তিনজন একই মোটরসাইকেলে যাচ্ছিল। মোটরসাইকেল চালাচ্ছিল বাদল, মাঝখানে বসেছিল আহাদ আর পিছনে বসা ছিল মানিক। এর মধ্যে বাদল তার ফোনের স্কিনশট দেখায় মানিককে। তাতে লেখা ছিল বলরামপুর গিয়ে মানিক ড্রাইভিং করবে, আর পিছনে বসবে বাদল। আর এই সেই লোক (আহাদ) যাকে বাদল উচিত শিক্ষা দেবে।

বলরামপুর পৌঁছে মানিক মোটরসাইকেল ড্রাইভিং শুরু করে। আর পেছনে বসে বাদল। এক পর্যায়ে বাদলের পকেটে থাকা বার্মিজ চাকু বের করে আহাদের গলায় পোচ মেরে দেয়। আহাদ তখন বাদলের হাতসহ চাকু ধরে ফেলে উল্টো বাদলকে আঘাত করে। চলন্ত মোটরসাইকেলে তারা ধস্তাধস্তি শুরু করে দেয়। এসময় মানিক মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যায়। তখন ভয়ে একটু দূরে পালিয়ে যায় মানিক। তখন আহাদ উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করলে বাদল নিস্তেজ হয়ে যায়। তখন মোটরসাইকেলে লাইট জ্বলছিল। আহাদ মোটরসাইকেলের লাইট বন্ধ করে দেয়। এরপর আহাদ নিজেও পড়ে যায়। তখন মানিক এসে ছুরি নিয়ে আহাদকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। এরপর সেই ছুরি পাশের ধান ক্ষেতে ফেলে দেয়। আরও মোটরসাইকেলে মোবাইলের স্কিনশট দেখানোর সময় বাদলের মোবাইল ফোন মানিকের পকেটে থেকে যায়। এরই মধ্যে রিং বেজে ওঠায় ভয় পেয়ে যায় সে। এক পর্যায়ে বাদলের মোবাইল ফোন পুকুরের মধ্যে ফেলে দেয়।

পুলিশ সুপার বলেন, আসামি মানিকের রিমান্ড আবেদন করা হবে। তদন্তে আরও কারও সংশ্লিষ্টতা পেলে কিংবা নতুন কোনো মোড় নিলে সেটি যুক্ত করে পুলিশ প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সালাউদ্দিন শিকদার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম রব্বানি শেখ, মনিরামপুর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সোয়েব আহমেদ খান, ডিবি ওসি সোমেন দাস প্রমুখ।


Post a Comment

0 Comments